‘ল্যান্ড অব সান অ্যান্ড সি’- ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ অ্যান্টিগা নিজেদের এভাবেই পরিচয় দেয়। তাদের স্লোগান এটি। বলার কারণটাও ভুল নয়, একদিকে উত্তাল ক্যারিবিয়ান সাগর আর মাথার উপর তপ্ত সূর্য। দুই মিলে যে একাকার। ভোর থেকে সূর্য তার তেজ নিয়ে একদিক থেকে উঠে সাগরের আরেক ধারে ডেবে লাল বর্ণ নিয়ে। এখানেই আজ বাংলাদেশ সূর্যোদয়ের অপেক্ষায়। চলতি বিশ্ব কাপে সেমিফাইনালে যেতে হলে হারাতে হবে ভারতকে। নয়তো শেষ চারের স্বপ্ন মিলিয়ে যাবে ক্যারিবিয়ন সাগরে। টাইগাররা সুপার এইটে উঠবে ভাবেনি কেউ! না এমনটাও ঠিক নয়, মনে মনে আশায় ছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা। কিন্তু আসরের আগে যে পারফরম্যান্স তাতে যেন মুখ ফুটে বলতে পারেননি।
শেষ পর্যন্ত বোলারদের কল্যাণে সেই লুকানো আশা পূরণ হয়েছে। এখন শেষ চারের যাওয়ার লড়াই। যার প্রথমটিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হেরে কঠিন করে তুলেছে। তাই জয়ের আজ কোনো বিকল্প ভাবনাও নেই। এই ম্যাচ জিতলেই সেমিতে খেলা নিশ্চিত হবে তাও নয়। শেষ আটে নিজেদের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে হারাতে হবে আফগানিস্তানকেও। অবশ্য কঠিন পরিস্থিতিতেও বিশ্বাস রাখছেন দলের সহ-অধিনায়ক তাসকিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘অবশ্যই এখনো সুযোগ আছে। এখানে উইকেটটা বেশ ভালো, এখনো আশা হারাচ্ছি না। আমরা যদি দুইটায় জিততে পারি তাহলে সুযোগ থাকবে।’
অন্যদিকে অ্যান্টিগাতে চলছে রোদ বৃষ্টির খেলা। এখানে যেকোনো মুহূর্তে বৃষ্টিতে ম্যাচ ভেসে যেতে পারে। যদি ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয় তাহলে তো আরও বড় বিপদ। পয়েন্ট ভাগাভাগি হয়ে যাবে। তাসকিন অবশ্য মনে করেন এমন হলেও তাদের জন্য ক্ষতি নেই। শেষ ম্যাচে আফগানদের হারালেও একটু সুযোগ থাকবে তাদের জন্য। তিনি বলেন, ‘পরের ম্যাচে বৃষ্টি হলে ১-১ পয়েন্ট ভাগ হবে, শেষ ম্যাচে একটা সুযোগ থাকবে। এটা হেরে গেছি, অল্প রানের সংগ্রহ ছিল তাই তারা আগ্রাসী খেলেছে। আমরা আশাবাদী পরের ম্যাচটা যদি জিতি একটা সুযোগ থাকবে।’
টি-টোয়েন্টিতে একে-অপরের বিপক্ষে ১৩ ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ-ভারত। এরমধ্যে মাত্র একটি জিতেছে টাইগাররা। এখন পর্যন্ত ২০ ওভারের বিশ্বকাপে চারবার দেখা হয়েছে দু’দলের। সব ম্যাচই জিতেছে টিম ইন্ডিয়া। পরিসংখ্যান বাংলাদেশের পক্ষে না থাকলেও, ভারতের বিপক্ষে বেশির ভাগ ম্যাচেই আগ্রাসী ও লড়াকু ক্রিকেট খেলেছে টাইগাররা। দু’দল যখনই মুখোমুখি হয়েছে, তারা উত্তেজনাপূর্ণ এবং রোমাঞ্চকর পারফরম্যান্স দেখিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ প্রতিবারই বাড়তি উন্মাদনা তৈরি করে, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং বাকি অন্য ক্ষেত্রে সব সময়ই ভারতকে হারানোর সুযোগ তৈরি করে টাইগাররা। টাইগার ভক্তরাও সেই আশাতে আছেন।
তবে বাংলাদেশের অন্যতম সমস্যা ব্যাটিং। ভিভ রিচার্ডস স্টেডিয়ামের ব্যাটিং উইকেটেও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১৪০ রানের বেশি করতে পারেনি। বিশেষ করে টপ অর্ডারের ব্যর্থতা, গোটা আসরেই যা ভুগিয়েছে দলকে। তবে তাসকিন মনে করেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ-যুক্তরাষ্ট্রের উইকেট ও কন্ডিশনটাও তাদের এমন ব্যর্থতার বড় কারণ। তিনি বলেন, ‘দেখেন আসার পর থেকে আমেরিকা ও এখানে (ওয়েস্ট ইন্ডিজে) শুরুর দিকে ব্যাটিং বান্ধব উইকেটে খেলতে পারিনি। একেকটা ভেন্যুতে একেক রকম কন্ডিশন, একেক রকম চ্যালেঞ্জ। এখানে ভিন্ন রকম চ্যালেঞ্জ। এখানে ব্যাটসম্যানদের সুবিধা একটু বেশি। আমরা আগে ব্যাটিং করলে অবশ্যই আমাদের অন্তত ১৭০-১৮০ করতে হবে। দিনে খেলা, আরেকটু ভালো থাকবে উইকেট। এমনকি বোলারদেরও চ্যালেঞ্জটা একটু বেশি। এখানেও বুদ্ধি খাটিয়ে বোলিং করতে হবে। সহজ হবে না কিন্তু আমরা যদি সঠিক প্রয়োগ করতে পারি সুযোগ আসলেও আসতে পারে।’
আজ ভারতকে হারাতে না পারলে সেমিফাইনালের দৌড় থেকে ছিটকে যাবে বাংলাদেশ। অন্যদিকে, বাংলাদেশের বিপক্ষে জিতলে সেমিফাইনাল প্রায় নিশ্চিত হয়ে যাবে ভারতের। সুপার এইটে নিজেদের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানকে ৪৭ রানে হারিয়েছে তারা। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলে অ্যান্টিগার উইকেট সম্পর্কে ধারণা পেয়েছে বাংলাদেশ। ৪৮ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে বার্বাডোজ থেকে অ্যান্টিগা যেতে হবে ভারতকে। ৪৮ ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নামবে বাংলাদেশ। কিন্তু ভেন্যু পরিবর্তন বা ভ্রমণ করতে হবে না টাইগারদের। তবে উইকেট, কন্ডিশনের চিন্তা বাদসহ অধিনায়ক সতীর্থদের একটাই বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বার্তা একটাই, ব্যাটিং-বোলিং দুই বিভাগেই আমাদের এক্সট্রা অর্ডিনারি পারফর্ম করতে হবে। পরের ম্যাচটা হেরে গেলে আর সেমিফাইনালের স্বপ্ন থাকবে না। নেক্সট ম্যাচটাই আমাদের জন্য ভাইটাল। আর সেজন্যই মিস্টেকের মার্জিনটা কম হতে হবে। আশা করি সেরা ক্রিকেট খেললে যেকোনো কিছু হতে পারে।’
চলতি বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচের পর টানা তিনটিতে একাদশে কোনো পরিবর্তন আনেনি বাংলাদেশ। তবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জাকের আলী অনিকের পরিবর্তে একাদশে রাখা হয় অলরাউন্ডার শেখ মেহেদীকে। তবে তিনিও কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেননি। আজ একাদশে পরিবর্তন আসবে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন থাকছে। শোনা যাচ্ছে তানজিদ তামিমকে বাদ দিয়ে ওপেনিংয়ে ফেরানো হতে পারে সৌম্য সরকারকে! তবে একাদশ যাইহোক, জয় ছাড়া শেষ চারের স্বপ্ন বহুদূর।