ভিপিএন নিয়ে আপত্তি কেন

0
36

ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্কের সংক্ষিপ্ত রূপ হচ্ছে ভিপিএন। বিভিন্ন কারণে এই ভিপিএন ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ে। ভিপিএন ব্যবহারে সুবিধার পাশাপাশি নানারকম ঝুঁকি ও অসুবিধা আছে। এর মধ্যে কিছু নিরাপদ আবার কিছু অনিরাপদ ভিপিএন আছে।

প্রযুক্তি খাতের বিশেষজ্ঞরা জানান, অনিরাপদ ভিপিএন ব্যবহারে বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা আছে। ইন্টারনেট ব্যবহারে ব্যক্তিগত সুরক্ষা, নিরাপত্তা বাড়ানো এবং অপ্রবেশযোগ্য কনটেন্ট দেখার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জনপ্রিয় হয়েছে ভিপিএন। তবে ভিপিএন ব্যবহার করা অবস্থায় ব্যাংক কিংবা অন্য কোনো মাধ্যমে যে কোনো ধরনের আর্থিক লেনদেন থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

নব্বইয়ের দশকে ভিপিএনের আবির্ভাব ঘটেছে। মূলত নিরাপত্তার স্বার্থেই ভিপিএন ব্যবহার করা হলেও স্ট্রিমিং, গোপনীয়তা, গেমিং, ভ্রমণ এবং নিষিদ্ধ সাইট ও কনটেন্টে অ্যাকসেস পেতেও ভিপিএন ব্যবহার করা হয়। শুরুতে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে ব্যবহার করা হলেও বর্তমানে ব্যক্তি পর্যায়েই বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। পরিসংখ্যান বলছে, গুগল প্লে স্টোরে শীর্ষ ডাউনলোড করা পাঁচটি অ্যাপসের মধ্যে চারটি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভিপিএন। এরপর আছে টিকটক।

বর্তমানে অসংখ্য ভিপিএন সফটওয়্যার ও অ্যাপ পাওয়া যায়। এই ভিপিএন টুল ডাউনলোড করার সময় ডিভাইস, ফেসবুক, ই-মেইলসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় ভিপিএন নির্মাতার কাছে। এ ঝুঁকির পাশাপাশি অনেক সময় ইন্টারনেটের গতিও কমে যায়।

এ ছাড়া ভিপিএনের মূল উদ্দেশ্য তথ্য গোপন করা। তাই সরকারি সংস্থাগুলো চাইলেও অনেক ক্ষেত্রে এসব তথ্য উদঘাটন করতে পারে না। ভিপিএন ব্যবহার করে বিশ্বব্যাপী বহু অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে অপরাধীদের শনাক্ত করা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে।

ফোর্বস ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে বিশ্বে ভিপিএন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন, যা মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ৩১ শতাংশ। বর্তমানে ভিপিএনের বাজার প্রায় ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হলেও ২০৩০ সাল নাগাদ এটি ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবাধ ইন্টারনেট ব্যবহারে নানারকম কঠোর বিধিনিষেধ আছে। সেসব দেশে মূলত ভিপিএন ব্যবহার করেন বহু মানুষ। বর্তমানে শীর্ষ ব্যবহারকারী দেশ কাতার। দেশটিতে ৭০ শতাংশ মানুষ ভিপিএন ব্যবহার করেন। এরপর সংযুক্ত আরব আমিরাত ৬২ শতাংশ এবং সিঙ্গাপুর ৫৪ শতাংশ। কম ব্যবহারকারীর তালিকায় শীর্ষে সাউথ আফ্রিকা। সেখানে মাত্র ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ মানুষ ভিপিএন ব্যবহার করেন। এরপর জাপান ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ এবং কেনিয়া ১ দশমিক ৯২ শতাংশ।

অনেক ভিপিএন বিনা মূল্যে বা কম খরচে ব্যবহার করা যায়। আবার অনেক ভিপিএন ব্যবহার করতে নির্দিষ্ট মূল্য পরিশোধ করতে হয়। এসব ভিপিএনে বিভিন্ন উন্নত ফিচার ও উচ্চগতির সার্ভার ব্যবহারের সুবিধা পাওয়া যায়। তাই বাজারে থাকা সব ভিপিএনই ভালো পরিষেবা দেয় না। ব্যক্তিভেদে ভিপিএন বাছাই নির্ভর করে। তাই ভিপিএনের বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন প্রযুক্তিবিদরা।

ভিপিএন অবৈধ যেসব দেশে

পরিচয় গোপন করে ইন্টারনেট ব্যবহার করার উপায় হচ্ছে ভিপিএন। ভিপিএন-এর প্রাথমিক উদ্দেশ্যই হচ্ছে ব্যবহারকারীর পরিচয় গোপন রাখা। ফলে কোনো কারণে ব্যবহারকারীর পরিচয় শনাক্তকরণ তথ্যাদি, ধরা যাক ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড গোপন করে ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায়।

বিশ্বজুড়ে অন্তত ১৬০ কোটি মানুষ বর্তমানে ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক বা ভিপিএন ব্যবহার করছে। এটি সারা বিশ্বে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যার প্রায় ৩১ শতাংশ। মার্কিন সাময়িকী ফোর্বসের তথ্যমতে, বিশ্বজুড়ে দ্রুত বাড়ছে ভিপিএন ব্যবহারকারীর সংখ্যা।
বর্তমানে ভিপিএন ব্যবহারকারীর দিক থেকে শীর্ষ দেশ কাতার। দেশটিতে ৭০ শতাংশ মানুষ ভিপিএন ব্যবহার করেন। এরপর সংযুক্ত আরব আমিরাত ৬২ শতাংশ এবং সিঙ্গাপুর ৫৪ শতাংশ। কম ব্যবহারকারীর তালিকায় শীর্ষে সাউথ আফ্রিকা। সেখানে মাত্র ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ মানুষ ভিপিএন ব্যবহার করেন। তবে আমাদের দেশে ভিপিএনের ব্যবহার বৈধ এবং ব্যবহারও কম। সাধারণ মানুষ অনেকে ভিপিএন সম্পর্কে জানেনও না। তবে বর্তমানে এই চিত্র ভিন্ন।

জানেন কি, বিশ্বের এমন কয়েকটি দেশ আছে যেখানে ভিপিএন ব্যবহার সীমিত, আবার কোথাও সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কোথাও কোথাও আছে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা। চলুন এমন দেশগুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক, যেন আপনি সেখানে গিয়ে ভিপিএন ব্যবহার করে বিপদে না পড়েন।

উত্তর কোরিয়া
এই তালিকায় প্রথমেই আছে উত্তর কোরিয়া। এই দেশটিতে ভিপিএন সম্পূর্ণ নিষেধ। যদিও এই খবরে পাঠক নিশ্চয়ই অবাক হচ্ছে না। কারণ সবাই কমবেশি জানেন উত্তর কোরিয়া সবার থেকে আলাদা। তাদের আছে নিজস্ব আইন। বিশেষ করে উত্তর কোরিয়ার প্রযুক্তিগত আইনগুলো সবার তুলনায় বেশি কঠোর। সেখানে ভিপিএন ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। তবে দাবি করা হয়, উত্তর কোরিয়ায় অনুমোদন ছাড়া ভিপিএন ব্যবহারের ফলে কারাদণ্ড হতে পারে। তবে অল্প সময়ের জন্য সেখানে ভ্রমণ করতে যাওয়া ব্যক্তিরা, দেশটিতে কোনো আইনি সমস্যা ছাড়াই ভিপিএন ব্যবহার করতে পারেন। প্রকৃতপক্ষে উত্তর কোরিয়ানদের ইন্টারনেটেই নিয়মিত প্রবেশাধিকার নেই।

চীন
যদিও চীনে ভিপিএন ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ নয়, তবে দেশটির বাসিন্দারা শুধু সরকার অনুমোদিত ভিপিএন ব্যবহার করতে পারেন। সরকার চাইলে এই ধরনের ভিপিএন-এ যেকোনো সময় হস্তক্ষেপ করতে পারবে। যা ভিপিএন ব্যবহারের উদ্দেশ্যকেই সম্পূর্ণভাবে নষ্ট করে। আর আপনি যদি চীনে একটি অননুমোদিত ভিপিএন ব্যবহার করতে গিয়ে ধরা পড়েন, তাহলে আপনাকে জরিমানা বা কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হতে পারে। চীনে একটি অননুমোদিত ভিপিএন ব্যবহারের শাস্তি ৫ বছর পর্যন্ত হতে পারে।

ইরাক
ইরাকে ২০১৩ সাল থেকে সবার জন্য ভিপিএন পরিষেবাগুলো নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ এটি মূলত সন্ত্রাসবাদের বিস্তার রোধ করার জন্য করেছে সেদেশের সরকার। কারণ আইএসআইএস ইন্টারনেটের মাধ্যমে লোক নিয়োগ করে, এমন খবর পাওয়া গেছে। এছাড়াও সরকার চরমপন্থী অনলাইন সামগ্রীর বিস্তার রোধ করতে চায়। যদিও ইরাকের আইনি ব্যবস্থাগুলো চীন বা উত্তর কোরিয়ার মতো কঠোর নয়। যদি কোনো কারণে কেউ ভিপিএন ব্যবহার করেন তাহলে তার শাস্তি এক বছরের জন্য জেল।

মিশর
মিশরে ভিপিএন ব্যবহার নিষিদ্ধ, তবে তা সোশ্যাল মিডিয়া সাইট, যেমন- ফেসবুক মেসেঞ্জার, ফেসটাইম, স্কাইপ, হোয়াটসঅ্যাপ এবং ভাইবারের মতো ভিওআইপি পরিষেবাগুলোর জন্য। তবে সরকারি কাজ বা অন্যান্য কাজে ভিপিএন ব্যবহারের অনুমতি আছে সেখানে। তবে সতর্কতার সঙ্গে ভিপিএনের পরামর্শ দেওয়া হয়।

রাশিয়া
২০১৭ সালে সারা বিশ্বে ভিপিএনের ব্যবহার আকাশচুম্বী হতে শুরু করে। তখন রাশিয়ান সরকার একের পর এক ভিপিএন প্রদানকারীদের নিষিদ্ধ করা শুরু করে। ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর রাশিয়ান সরকারের অবস্থান শক্ত। তারা এখন পর্যন্ত এক ডজনেরও বেশি ভিপিএন প্রদানকারীকে নিষিদ্ধ করেছে এবং আরও করবে বলে জানা যায়। দেশটি ভিপিএন এবং প্রক্সির ব্যবহার কঠোরভাবে সীমাবদ্ধ করেছে। এ ছাড়া টর ব্রাউজার ব্যবহারও দেশটি সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করেছে। যদিও করপোরেট ভিপিএনগুলো এখনো রাশিয়ায় বৈধ। তবে রাষ্ট্রপতি পুতিন বলেছেন, অন্যান্য ভিপিএন প্রদানকারীরা যেন ব্যবহারকারীদের সরকার কর্তৃক কালো তালিকাভুক্ত সাইটগুলোতে প্রবেশের অনুমতি না দেয়।

সংযুক্ত আরব আমিরাত
সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২০১৬ সালে সাইবার অপরাধ আইন সংশোধনের পর ভিপিএন ব্যবহার অবৈধ করা হয়। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সরকার এনক্রিপশনকে খুব ভালো চোখে দেখে না এবং ভিপিএন যেভাবে কাজ করে তা এখন সে দেশে অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়। তাই সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিপিএন ব্যবহার করে ধরা পড়লে জরিমানা কিংবা এমনকি জেলের সাজাও হতে পারে। আর সেই জরিমানার পরিমাণ অনেক বৃহৎ। ক্ষেত্রবিশেষে এটি ১ লাখ মার্কিন ডলারেরও বেশি হতে পারে। তবে সরকারের মতে, ভিপিএন একটি বৈধ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু এই ‘বৈধ’ বিষয়টি নিয়ে বেশ অস্পষ্টতা রয়েছে।

তুর্কমেনিস্তান
ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে তুর্কমেনিস্তান বেশ কঠোর। তাই এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, ভিপিএনের উপরও তাদের কঠোরনীতি আরোপ হবে। ২০১৯ সালে তুর্কমেনিস্তান ভিপিএন প্রদানকারীদের ব্লক করা শুরু করে। তারপর ২০২১ সালে সরকার কর্তৃক নির্দেশ দেওয়া হয় যে, ইন্টারনেট সংযোগ নেওয়ার আগে ব্যবহারকারীদের কোরানে শপথ নিতে হবে যে তারা কখনো ভিপিএন ব্যবহার করবে না। কেউ তুর্কমেনিস্তানে ভিপিএন ব্যবহার করে ধরা পড়লে তাকে জরিমানা এবং গ্রেফতার করা হতে পারে।

বেলারুশ
২০১৫ সালে বেলারুশিয়ান সরকার ভিপিএন, প্রক্সি এবং টর ব্রাউজার-এর মতো সব ধরনের অনলাইন কারচুপির সরঞ্জামগুলো ব্যবহারের ওপর সম্পূর্ণরূপে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। সংক্ষেপে বলা যায়, দেশটির কোনো বাসিন্দা কোনোভাবে বেনামে ওয়েব সার্ফ করতে পারবেন না।

তুরস্ক
২০১৬ সালে তুর্কি সরকার ১০টি ভিপিএন প্রদানকারীর পাশাপাশি টর ব্রাউজার নিষিদ্ধ করে। দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষা এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানানো হয়। তবে ভিপিএন তুরস্কে সম্পূর্ণরূপে অবৈধ নয়। নর্ডভিপিএন এবং এক্সপ্রেসভিপিএনের মতো বেশ কয়েকটি বড় বড় ভিপিএন এখনো দেশের মধ্যে বৈধভাবে ব্যবহার করা যায়।

উগান্ডা
উগান্ডায় সব ধরনের ভিপিএন ট্র্যাফিক সরকার থেকে ব্লক করা। এর কারণ, উগান্ডা সরকার ২০১৮ সালে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের ওপর কর চালু আরোপ করে। তখন এর বাসিন্দারা কর ফাঁকি দেওয়ার জন্য ভিপিএন ব্যবহার শুরু করে। তবে ২০২১ সালে উগান্ডা সরকার এই আইন উঠিয়ে নেয়। কিন্তু দেশটির বাসিন্দারা এখনো অবরুদ্ধ ওয়েবসাইটগুলো প্রবেশ করতে, ব্যক্তিগত যোগাযোগ করতে এবং তাদের অনলাইন পরিচয় গোপন রাখতে ভিপিএন ব্যবহার করে। তবে উগান্ডা সরকার ভিপিএন ব্যবহারকারীদের গ্রেপ্তারের হুমকি দিয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here