দুর্নীতির জালে বেনজীর

0
33

ঢাকায় ফ্ল্যাট, গোপালগঞ্জ-মাদারীপুরে বিপুল সম্পত্তির পর সাগর মাঝে সেন্ট মার্টিন দ্বীপেও বেনজীর আহমেদের জমির খোঁজ তো আগেই পাওয়া গেছে, এবার বান্দরবানের পাহাড়েও তার জমি থাকার খবর মিলেছে।

সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীরের সম্পত্তি ক্রোকে আদালতের আদেশের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে তার জমি-বাড়ির খবর একে একে বেরিয়ে আসছে।

সবশেষ পার্বত্য জেলা বান্দরবানে তার প্রায় ১০০ একর জমির সন্ধান পাওয়া গেছে; যেখানে রয়েছে মাছ ও গরুর খামার, ফলের বাগান আর বাংলো বাড়ি।

এর মধ্যে সুয়ালক ও লামা উপজেলার ডলুছড়ি মৌজার টংগ্যঝিড়ি এলাকায় প্রায় ৫০ একর জমি বেনজীরের বলে তথ্য দিয়েছে স্থানীয়রা।
তারা জানায়, সুয়ালক এলাকায় চা বোর্ড অফিস সংলগ্ন এলাকায় বেনজীর, তার স্ত্রী জীশান মির্জা ও মেয়ে ফারহীন রিশতা বিনতে বেনজীরের জমি রয়েছে। পুলিশ ও র‌্যাবের প্রধান থাকাকালে ২৫ একর জায়গা ইজারা নেওয়ার পর ওই এলাকার আশেপাশের ১০০ একর জায়গাই দখলে নেন তিনি।
ওই জমিতে এখন রয়েছে একটি মৎস্য ও গরুর খামার। বিশাল ফলের বাগানের পাশে একটি দোতলা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাংলো রয়েছে। বাগান বাড়িতে যাওয়ার জন্য ইটের একটি রাস্তাও তৈরি করা হয়েছে।

পার্বত্য চুক্তি অনুযায়ী, পার্বত্যাঞ্চলে বন্দোবস্তযোগ্য খাস জমিসহ যে কোনও জায়গা জমি জেলা পরিষদের পূর্বানুমোদন ছাড়া ইজারা কিংবা কেনা-বেচা যায় না। স্থানীয় ছাড়া অন্যদের জমি কেনাও কঠিন।

এক্ষেত্রে দেখা যায় যে ভিন্ন নামে জমি কেনা হয়, আবার ইজারাও নেওয়া হয়।

দোহাজারীর লেদু সওদাগরের নামে থাকা ২৫ একর জমি বেনজীর ইজারা নেওয়ার পর দখলে নেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

লেদু সওদাগরের ছেলে মো. লোকমান বলেন, “বাবার নামে রাবার হর্টিকালচার প্লটের লিজের ২৫ একর জায়গা বেনজীর আহমেদ দখল করে নেওয়ার পর সেগুলোর আর খোঁজখবর নেওয়া হয়নি।”

চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশের ব্যবসায়ী ইলিয়াস চৌধুরীর ২৫ একর জমিও দখল করার অভিযোগ রয়েছে সাবেক এই পুলিশ প্রধানের বিরুদ্ধে।

ইলিয়াস বলেন, তার নিজের কেনা ৪৫ গণ্ডা জায়গা প্রথমে দখল করে নেন বেনজীর। পরে পাশে থাকা জমি ইজারা নিয়ে পুরোটাই দখল করেন।

বান্দরবান জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা মং ওয়াইচিং মারমা সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীরের জায়গাগুলো দেখাশোনা করছেন।

২০১৬ সালে করা তৈরি দলিলে দেখা গেছে, বেনজীর ও তার পরিবারের সঙ্গে আমমোক্তার নামায় মং ওয়াইচিং মারমার নাম রয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে মং বলেন, তার কেনা জায়গার পাশে বেনজীরের জায়গা থাকায় তৎকালীন পুলিশ সুপারের অনুরোধে ওই জায়গাগুলো তিনি দেখাশুনা করে যাচ্ছেন।

কিছু জমি বেনজীরের থাকলেও সেখানে থাকা বাগানবাড়ি, মৎস্য ও গরুর খামার তার বলে দাবি করেন মং।

বান্দরবানের লামা উপজেলার ডলুছড়ি মৌজায় বেনজীরের আরও ৫৫ একর জায়গা রয়েছে বলেও খবর পাওয়া গেছে। স্থানীয়দের সেই জমি দখল করে নেওয়ায় অভিযোগ বেনজীরের বিরুদ্ধে।

বেনজীরের এই জমির বিষয়ে বান্দরবানের দায়িত্বে থাকা কক্সবাজারের দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ-পরিচালক সুবেল আহমেদ বলেন, সাবেক পুলিশ প্রধানের জায়গা জমির বিষয়টি ঢাকায় কমিশন থেকে দেখভাল হচ্ছে।

“ঢাকা থেকে নির্দেশনা পাওয়া গেলে এসব সম্পত্তি নিয়ে তদন্ত করা হবে,” বলেন তিনি।

গোপালগঞ্জের সন্তান বেনজীর দুই বছর আইজিপির দায়িত্ব পালনের পর ২০২২ সালে অবসরে যান। আইজিপির দায়িত্ব পালনের আগে তিনি র‌্যাবের মহাপরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন। র‌্যাবের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে যুক্তরাষ্ট্র বেনজীরের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দেয়।

সম্প্রতি কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে বেনজীরের বিপুল পরিমাণ অর্থ-বিত্তের মালিক হওয়ার অভিযোগ তোলা হয়। তারপর বেনজীরের সম্পদ অনুসন্ধানে আদালতে আবেদনও হয়। এরপর দুদকও তৎপর হয়।

পরে বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তালিকা জমা পড়ে আদালতে। তারপর বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা বিভিন্ন সম্পত্তির দলিল, ঢাকায় ফ্ল্যাট ও কোম্পানির আংশিক শেয়ার জব্দের নির্দেশ দেয় ঢাকার আদালত।

এত জমি কেনার টাকার জোগানের ব্যাখ্যা দিতে বেনজীরকে ৬ জুন হাজির হতে তলব করেছে দুদক। তবে এর মধ্যে তিনি বিদেশে চলে গেছেন বলে খবর এসেছে।জমি দখল নিয়ে বেনজীরের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর তিনি সাংবাদিকদের এড়িয়ে চলছেন। তবে সম্প্রতি ফেইসবুকে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here