পাহাড়ে কেন অশান্তি

0
20

প্রথমে চোর সন্দেহে পিটুনিতে দীঘিনালায় এক বাঙালির মৃত্যু, তারপর পাহাড়িদের বাড়ি ঘরে হামলা-অগ্নিসংযোগ; এরপর সেনাবাহিনীর সঙ্গে গোলাগুলিতে তিন পাহাড়ি নিহত- সব মিলিয়ে উত্তপ্ত এখন পার্বত্য চট্টগ্রাম।

দীঘিনালা উপজেলা থেকে যে সংঘাতের শুরু, তা ছড়িয়েছে খাগড়াছড়ি জেলা সদরেও; বিক্ষোভ হয়েছে রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানে। তিন জেলায় পাহাড়িদের ডাকে চলছে অবরোধ। আবার পরিবহন মালিকরাও ডেকেছে ধর্মঘট, যাদের নেতৃত্বে রয়েছে বাঙালিরা।

এই উত্তেজনা তিন পার্বত্য জেলায়ই দাঙ্গায় রূপ নিতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে পার্বত্যাঞ্চলে মোতায়েন থাকা প্রতিরক্ষা বাহিনীর পক্ষ থেকে। স্থানীয় প্রশাসন রাঙ্গামাটিতে ১৪৪ ধারা জারি করেছে।

বাংলাদেশে বিভিন্ন নৃ গোষ্ঠী অধ্যুষিত পাহাড়ে এই অশান্তির শুরু কবে? সেই ইতিহাস ঘাঁটতে গেলে যেতে হবে অন্তত মুঘল আমলে। মানে আজ থেকে ৫০০ বছর আগে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির প্রেক্ষাপট নিয়ে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের (পিআইবি) এর গবেষক পপি দেবী থাপা’র এক বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, চাকমা রাজা মংছুই ১৪১৮ সালে মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে কক্সবাজারের রামু, টেকনাফ এলাকায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। তখন থেকে চাকমারা এসে পার্বত্য চট্টগ্রামে আবাস গাড়ে, পরে মারমারাও এসে সেখানে বসতি গড়ে তোলে।

সম্রাট আওরঙ্গজেবের সময় মুঘলরা পার্বত্য চট্টগ্রাম দখল করে। তাদের মাধ্যমে ওই অঞ্চলের কর্তৃত্ব পায় বাংলার নবাবরা। ১৭৬০ সালে নবাব মীর কাশেম আলী পার্বত্য চট্টগ্রামের নিয়ন্ত্রণ ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে তুলে দেন। তখন চাকমারা ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছিল, তবে পরে হার মানে।

ব্রিটিশ আমলে ইংরেজরা পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রশাসনিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ১৯০০ সালে তারা জারি করে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন অ্যাক্ট’। তাতে সেখানে বসবাসরত পাহাড়িদের অধিকার ও স্বার্থ বিশেষভাবে সংরক্ষণ করা হয়।

ওই আইনে ‘অ-উপজাতিদের’ সেখানে জমি কেনা নিষিদ্ধ করা হয়। কোনও ‘অ-উপজাতি’র ওই অঞ্চলে যেতেও জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হতো।

পাকিস্তান পর্ব

ভারত ভাগের সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম পড়ে পাকিস্তানে, যদিও সেখানে বসবাসরত পাহাড়িদের একটি অংশ ভারতে যুক্ত হওয়ার পক্ষে ছিল।

পাকিস্তান হওয়ার পর পাকিস্তানি সেনারা পার্বত্য চট্টগ্রামে গিয়ে চাঁদ-তারা পতাকা ওড়ায়। তারপর পার্বত্য চট্টগ্রামের ব্রিটিশ আমলের সাংবিধানিক বিশেষ মর্যাদা খর্ব করা হতে থাকে।

পপি দেবী থাপা লিখেছেন, পার্বত্যবাসীর রাজনৈতিক বঞ্চনার শুরু সেখানে।

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ ১৯৯২ সালে ‘বাংলাদেশ রাষ্ট্র এবং জাতিগত সমস্যা : পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিপ্রেক্ষিত’ শিরোনামের এক নিবন্ধে লিখেছেন, “১৯৫৪ সালের পূর্ব পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম বিশেষ জেলার মর্যাদা পেলেও অঞ্চলের জনগণের কোনও ভোটাধিকার ছিল না। ১৯৫৫ সাল থেকেই এ জেলাকে একটি সাধারণ জেলায় পরিবর্তনের চেষ্টা নেওয়া হয় এবং ১৯৬৩ সালে সংবিধান সংশোধন করে বিশেষ মর্যাদা বাতিল করা হয়।”

পপি দেবী থাপা লিখেছেন, ১৯৬৫ সালে পূর্ব পাকিস্তান হাইকোর্ট এক আদেশে যেসব অ-উপজাতি ১৫ বছর বা এর বেশি সময় পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাস করছেন, তারা সেখানে জমি কেনার অধিকার পায়।

“পার্বত্য চট্টগ্রামের এসব শাসনতান্ত্রিক পরিবর্তন এলাকার জনগণের মতামত এবং তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা, সম্মতি বা ঐকমত্যের ভিত্তিতে করা হয়নি। এমনকি উন্নয়ন পরিকল্পনায়ও তাদের অংশগ্রহণের সুযোগ বা অধিকারকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হয়নি। বরং কোনও কোনও উন্নয়ন প্রকল্পে তাদের বিপুল ক্ষয়ক্ষতি এবং ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ হতে হয়েছে।”

তখন কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র কীভাবে পাহাড়িদের ওপর বড় আঘাত হয়ে এসেছিল, তা ফুটে উঠেছে আনু মুহাম্মদের লেখায়।

তিনি লিখেছেন, “পাহাড়ি জনগণের নেতৃবৃন্দের প্রবল বিরোধিতা সত্ত্বেও ইউএসএইডের ঋণের টাকায় ৫ বছর ধরে রাঙামাটিতে বাস্তবায়ন করা হয় কাপ্তাই বাঁধ প্রকল্প। এতে এ অঞ্চলের মোট আবাদি জমির শতকরা ৪০ ভাগ (প্রায় ৫৫ হাজার একর জমি)সহ ২৫০ বর্গমাইল অঞ্চল পানিতে ডুবে যায়।

“এ প্রকল্পের ফলে প্রায় ১ লাখ চাকমা ও অন্যান্য জাতিসত্তার মানুষ (শতকরা প্রায় ২০ ভাগ) উদ্বাস্তু হয়ে পড়েন। এদের মধ্যে ৬০ হাজার কোনোরকম ক্ষতিপূরণ পাননি। ক্ষতিপূরণ দেবার কথা ছিল ৫ কোটি ৯০ লাখ ডলার, দেওয়া হয় মাত্র ২৫ লাখ ডলার। অঞ্চলে জুমচাষের ঐতিহ্যগত পদ্ধতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, হাজার হাজার পরিবার উদ্বাস্তু হয়ে অঞ্চল ত্যাগ করেন। এ প্রকল্প পুরো এলাকায় একটি ভয়াবহ অবস্থা তৈরি করে।”

বিপুল সংখ্যক পাহাড়ি যখন উদ্বাস্তু হয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল, তখন ১৯৬৬ সাল থেকে পরিকল্পিতভাবে পার্বত্যাঞ্চলে বাঙালি পুনর্বাসন শুরু হয়।

বাংলাদেশ পর্ব

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়িদের অনেকে অস্ত্র হাতে অংশ নিয়েছিল। তাদের মধ্যে ইউ কে চিং মারমা যুদ্ধে বীরত্বের জন্য বীর বিক্রম খেতাবও পেয়েছিলেন। তবে চাকমা রাজা ত্রিদিব রায়সহ একটি অংশ পাকিস্তানের পক্ষে ছিল তখন।

স্বাধীনতার পর পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠীগুলোর মধ্যেও জাতিগত স্বাতন্ত্র্য চেতনার বিস্তার ঘটেছিল। তখন জুম্ম জাতিগোষ্ঠীর অবিসংবাদিত নেতা হয়ে ওঠেন মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা (এম এন লারমা)। তার নেতৃত্বে গঠিত হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস)। ১৯৭০ এর নির্বাচনে গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হওয়া এম এন লারমা ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের প্রথম সংসদেও নির্বাচিত হয়েছিলেন।

বাংলাদেশের সংবিধান চূড়ান্ত করবার সময় তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বায়ত্তশাসনের দাবি তোলেন। ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম আইন পুনরুজ্জীবিত করার পাশাপাশি অ-উপজাতীয়দের সেখানে থাকা নিষিদ্ধ করার দাবিও জানান তিনি। সংসদে বক্তব্যে তিনি পাহাড়ি জনগণের স্বতন্ত্র অস্তিত্বের বিষয়টি উত্থাপন করেন।

কিন্তু এম এন লারমার দাবিতে সরকার কর্ণপাত করেনি। উল্টো ১৯৭৩ সালে পার্বত্যাঞ্চলে নিরাপত্তার কথা বলে প্রথম সামরিক ক্যাম্প বসানো হয়। তার প্রতিক্রিয়ায় গড়ে ওঠে জেএসএসের সামরিক শাখা শান্তি বাহিনী, যার নেতৃত্বে ছিলেন এম এন লারমার ভাই জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা)।

আনু মুহাম্মদ লিখেছেন, ১৯৭৫ সালে সামরিক শাসন শুরুর পর পাহাড়ি জনগণের প্রতি রাজনৈতিক অস্বীকৃতি রূপ নেয় সামরিক নিপীড়নে। সরকারিভাবে উদ্যোগ নিয়ে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দরিদ্র বাঙালিদের অর্থ ও জমির লোভ দেখিয়ে পার্বত্যাঞ্চলে পুনর্বাসিত করবার কাজও চলে ব্যাপকভাবে।

তার নিবন্ধে বলা হয়, কয়েক একর জমি ও ৩৬০০ টাকা দিয়ে ১৯৮০ সালেই সমতলভূমি থেকে ১ লাখ বাঙালি পরিবার পাহাড়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর আগে ১৯৭৯ সালে নেওয়া হয় ৩০ হাজার পরিবার। ১৯৬০ সালে যেখানে বাঙালি জনসংখ্যা ছিল মোট জনসংখ্যার শতকরা ২৩ ভাগ, সেখানে ১৯৮৭ সাল নাগাদ তা শতকরা ৫০ ভাগ ছাড়িয়ে যায়।

১৯৮০ সালের ২৫ মার্চ বাঙালি-পাহাড়ি দাঙ্গায় অনেক হতাহতও হয়, যা লিখেছেন পপি দেবী থাপা। এরপর শান্তিবাহিনী কর্তৃক অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়, ১৯৮৪ সালের ৩১ মে বরকলে ১০০ জন বাঙালিকে শান্তি বাহিনীর হত্যার কথাও আছে তার বইয়ে। পাহাড়িদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে ১৯৮৩ সালে এম এন লারমাও খুন হন।

এইচ এম এরশাদের সামরিক শাসনামলে ১৯৮৫ সালের ২১ অক্টোবর খাগড়াছড়িতে জেএসএসের সঙ্গে সরকারের প্রথম আলোচনা হয়। দুই বছর পর পার্বত্য সমস্যা নিয়ে আলোচনার জন্য ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নরসীমা রাও বাংলাদেশে এসেছিলেন।

পাহাড়ি অনেকে উদ্বাস্তু হয়ে যেমন ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল, তেমনি ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা সশস্ত্র শান্তি বাহিনীকে মদদ দিয়েছিল বলেও অভিযোগ রয়েছে।

এরপর সরকার বেশ কয়েকবার জেএসএসের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নিলেও ফল আসেনি, সংঘাতও চলতে থাকে।

বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার পর ১৯৯২ সালে পার্বত্য সংকট অবসানে তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী, সাবেক সেনা কর্মকর্তা অলি আহমদকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করে। আলোচনার সময় দফায় দফায় অস্ত্র বিরতির ঘোষণা দিচ্ছিল জেএসএস।

শান্তি চুক্তি, অতঃপর

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর পার্বত্য চট্টগ্রাম সংকট অবসানে উদ্যোগী হয়। মন্ত্রিসভা একটি জাতীয় কমিটি করে, তার প্রধান করা হয় সংসদের তৎকালীন প্রধান হুইপ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহকে।

কমিটিতে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু বিএনপির দুজন কমিটির কাজে অংশ নেয়নি।

কয়েক দফায় সংলাপের পর ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তিতে সই করেন সন্তু লারমা ও হাসানাত আবদুল্লাহ।

শিল্পী শাহাবুদ্দিনের স্বাধীনতার পতাকা আর অ, আ, ক, খ বর্ণমালা আঁকা তৈলচিত্রের নিচে রাখা টেবিলের দুই প্রান্তে বসেছিলেন চুক্তি স্বাক্ষরকারী দুজন। ১৫ পৃষ্ঠার চুক্তিপত্রে তারা স্বাক্ষর করার পর সবার উচ্ছ্বাসে ছিল পাহাড়ে শান্তি ফিরে আসার আশা।

কিন্তু শান্তি চুক্তির পর পাহাড়িদের মধ্যে পক্ষে-বিপক্ষে দেখা দেয় বিভেদ। তাতে জনসংহতি সমিতি ভেঙে গড়ে ওঠে আরেকটি দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। এই দুই সংগঠন আবার ভেঙে যায়। এখন পাহাড়িদের চারটি সংগঠন সক্রিয় পার্বত্য চট্টগ্রামে।

অন্যদিকে শান্তি চুক্তির বিরোধিতা করে পার্বত্যাঞ্চল বসবাসরত বাঙালিরা গড়ে তোলে সম অধিকার আন্দোলন নামে সংগঠন। পাহাড়িরা যেখানে পার্বত্যাঞ্চল থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের দাবি জানায়, তার বিরোধিতা করে সম অধিকার আন্দোলন। তাদের দাবি, চুক্তি বাস্তবায়িত হলে পার্বত্যাঞ্চলে বসবাসরত বাঙালিরা পাহাড়িদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়বে।

এদিকে শান্তি চুক্তি সই হওয়ার পরও তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হওয়ায় ক্ষোভ রয়েছে সন্তু লারমার। বিভিন্ন সময় পুনরায় অস্ত্র হাতে নেওয়ার হুমকিও দেন তিনি। গত বছরও তিনি বলেছিলেন, চুক্তি স্বাক্ষরের ২৫ বছর হয়ে গেলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। ১৪ বছর ধরে চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া থেমে গেছে। চুক্তি বাস্তবায়নে আবারও বড় লড়াই করতে হবে।

তাহলে পার্বত্য শান্তি চুক্তিতে লাভ কী হয়েছে? এর উত্তরে ইতিহাসের অধ্যাপক-গবেষক মেজবাহ কামাল ২০২৩ সালে ডয়চে ভেলে বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “শান্তি চুক্তি হয়েছে বলেই তো রাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের যে সহিংসতা, সেটা বন্ধ হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে বেশ কিছু উন্নয়নমূলক কাজ করা গেছে। সমতলের মানুষের জন্য সেখানে চলাচল অবারিত হয়েছে। এছাড়া এক ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে উঠেছে। যেমন, পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ, তিন পার্বত্য জেলায় জেলা পরিষদ গড়ে উঠেছে।”

বিরোধের কেন্দ্রে ভূমি

পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তিতে ব্রিটিশ আমলের মতোই যুক্ত করা হয়েছে, পার্বত্যাঞ্চলে ভূমি কেনা-বেচা, হস্তান্তর স্থানীয় পরিষদের অনুমোদন ছাড়া করা যাবে না। এর বিরোধিতা করছে সম অধিকার আন্দোলন।

পার্বত্যাঞ্চলে বিরোধ নিয়ে মেজবাহ কামাল বলেন, “পাহাড়ি-বাঙালি দ্বন্দ্ব অনেক পুরনো, সেটা আমি মনে করি না। বাঙালিদের তো এক সময় পাহাড়িরাই আমন্ত্রণ করে নিয়ে গেছেন, জমি চাষাবাদের প্রয়োজনে। সম্পর্কটা সুসম্পর্কই ছিল। সেখানে আদি ও স্থায়ী বাঙালি তো বরাবরই ছিল।

“রাজনৈতিক বিবেচনার ক্ষেত্রে তাদের সংখ্যালঘুকরণের উদ্যোগ এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে ধর্মীয় আধিপত্য প্রতিষ্ঠার তাগিদ থেকে এখানে যখন থেকে সেটেলার কার্যক্রম শুরু হলো, তখন থেকেই সংকটটা ঘনীভূত হলো।”

এখন বিরোধের অবসান কীভাবে তে পারে— সেই প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমি মনে করি, এখনও যে জমিটা পাহাড়ের মানুষের হাতে আছে, সেটা যেন তাদের হাতে থাকে এবং তাদের বেঁচে থাকার জন্য যে পরিসরটুকু দরকার, সেটা যেন তাদের নিয়ন্ত্রণে ছেড়ে দেওয়া হয়।

“নিয়ন্ত্রণ বলতে আমি যেটা বোঝাতে চাইছি, সেখানে যেন অন্যদের প্রবেশাধিকার সীমিত করা হয়। পৃথিবীর বহু দেশেই তো আদিবাসীদের জন্য নির্ধারিত সীমানা আছে। সেখানে তো অন্যদের প্রবেশাধিকার বা জমি ক্রয়-বিক্রয় নিষেধ বা সীমিত। সেটা করে ফেললেই তো হয়। এটা হলে তো আদিবাসীদের জীবন নিরঙ্কুশ করা যায়।”

বাঙালিদের সরিয়ে নেওয়ার যে দাবি পাহাড়িরা করে আসছে, সে বিষয়ে মেজবাহ কামাল বলেন, “এই দাবি তারা কেন করেন, সেটা তো বুঝতে হবে। কারণ, তাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন ক্রমাগত সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। সেখানে কিন্তু মাথাপিছু আবাদযোগ্য জমি সমতলের চেয়ে কম। ফলে তাদের তো বাঁচতে হবে। তাদের পেটে লাথি মেরে তো আমরা সেখানে কর্তৃত্ব করতে পারব না।

“আমরা সেখানে সকল জাতিসত্তার সমানাধিকার নিশ্চিত করতে পারছি না। আমরা এখনও এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র, বিকেন্দ্রীকরণ করতে পারছি না। মনোকালচারের জায়গায় যদি মাল্টিকালচারাল রাষ্ট্র করা যায়, একটা বহুজাতির রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া যায় এবং স্থানীয় মানুষের জমি, জল, জঙ্গলের উপর অধিকারকে স্বীকৃতি দিলে আমি মনে করি সম্প্রীতির আবহ গড়ে উঠবে। আমরা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে সমমর্যাদায় বাস করতে পারবো এবং এই নিশ্চয়তাটুকু পেলেই পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here