নিষিদ্ধ দল কারা ও কেন

0
25

নাশকতামূলক কর্মকান্ডের জন্য গত দুই দশকে দেশে ৯টি সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্র শিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলে তা হবে দশম ঘটনা। নির্বাহী আদেশে সংগঠন নিষিদ্ধের পর থেমে থাকেনি তাদের তৎপরতা। অনেকটা গোপনে কাজ চালিয়ে যায় নেতা-কর্মীরা।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করা এ দলকে ১৯৭২ সালে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মের অপব্যবহারের’ কারণে। আর এবার দলটিকে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে জন নিরাপত্তার জন্য হুমকি বিবেচনা করে।

দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা পরিপন্থী এবং জননিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় সর্বশেষ ২০২৩ সালের বুধবার ৯ আগস্ট জঙ্গি দল জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়াকে নিষিদ্ধ করে সরকার। সেদিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের রাজনৈতিক-২ শাখা এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সরকারের কাছে এ মর্মে প্রতীয়মান হয় যে, জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া নামক জঙ্গি দল/সংগঠনটির ঘোষিত কার্যক্রম দেশের শান্তি শৃঙ্খলা পরিপিন্থি। ইতোমধ্যে দল/সংগঠনটির কার্যক্রম জননিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে বিবেচিত হওয়ায় বাংলাদেশে এর কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হল।

জঙ্গি তৎপরতার কারণে এ নিয়ে বাংলাদেশে নয়টি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হয়। এর আগে জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি), জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ (জেএমজেবি), হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ (হুজি), শাহাদাৎ-ই আল-হিকমা, হিযবুত তাহরীর, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, আনসার আল ইসলাম এবং আল্লাহর দল-কে নিষিদ্ধ করা হয়।

গত বছরের ২৩ আগস্ট কুমিল্লা সদর এলাকা থেকে আট জন তরুণ নিখোঁজ হন। ওই ঘটনায় নিখোঁজ তরুণদের পরিবার কুমিল্লার কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি করে। ওই আট তরুণের উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে র‍্যাব “জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া” নামক একটি নতুন জঙ্গি সংগঠনের সক্রিয় থাকার তথ্য পায়। র‍্যাব জানতে পারে, এই সংগঠনের সদস্যরা পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘কেএনএফ’-এর সহায়তায় সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিচ্ছে।

অক্টোবরের পর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ও পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ইতোমধ্যে নতুন এই জঙ্গি সংগঠনের আমীর আনিসুর রহমান মাহমুদসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাসহ সর্বমোট ৮২ জন এবং পাহাড়ে অবস্থান, প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য কার্যক্রমে জঙ্গিদের সহায়তার জন্য পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘কেএনএফ’-এর ১৭ জন নেতা ও সদস্যকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হয়।

র‍্যাব নতুন এই জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রম সম্বন্ধে তথ্যাদি সর্বপ্রথম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে এবং সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ করার জন্য আবেদন করে। এই প্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জারীকৃত প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’-এর কার্যক্রম জননিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে বিবেচিত হওয়ায় সংগঠনটিকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা হয়।

এসব সংগঠনের মধ্যে জেএমবিসহ চারটি দল নিষিদ্ধ হয় ২০০৫ সালে। বোমা হামলা করে বিচারক হত্যার দায়ে জেএমবির শীর্ষনেতা শায়খ আব্দুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলাভাইর ফাঁসি হয়। আর উগ্রপন্থা প্রচারের জন্য ২০০৯ সালে নিষিদ্ধ করা হয় হিযবুত তাহরীরকে।

২০১৩ সালে ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যাকাণ্ডের পর আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের তৎপরতার খবর আসে। ওই মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে কারাগারে আছেন সংগঠনটির আমির মুফতি জসীমউদ্দীন রাহমানী। তার দুই অনুসারীর মৃত্যুদণ্ড, একজনের যাবজ্জীবন এবং আরও চারজনের বিভিন্ন মেয়াদের সাজার রায় হয়েছে।

২০১৫ সালে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নিষিদ্ধ হওয়ার পর এর সদস্যরাই সেনাবাহিনীতে ব্যর্থ অভ্যুত্থানচেষ্টার পরিকল্পনাকারী বরখাস্ত মেজর জিয়াউল হকের নেতৃত্বে আনসার আল ইসলাম নামে তৎপরতা চালিয়ে আসছিলেন। ২০১৭ সালের মার্চে আনসার আল ইসলামকেও নিষিদ্ধ করে সরকার।

১৯৯৫ সালে গঠিত হয়েছিলো আল্লাহর দল। ২০০৪ সালের শেষ দিকে সংগঠনটি জেএমবির সঙ্গে একীভূত হয়। পরের বছর ১৭ অগাস্ট সারাদেশে জেএমবির বোমা হামলায় আল্লাহর দলের সংশ্লিষ্টতা ছিলো বলে তথ্য পাওয়া যায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে জেএমবি দুর্বল হয়ে পড়লে আল্লার দল সক্রিয় হয়ে ওঠে এর আমির মতিন মেহেদীর নেতৃত্বে। ২০১৪ সালে আল্লার দলের নাম পরিবর্তন করে ‘আল্লার সরকার’ রাখা হয়। তবে এরপর কয়েক বছর সংগঠনটির তেমন কোন তৎপরতা দৃশ্যমান হয়নি।

২০১৯ সালে জেএমবির সহযোগিতায় ‘আল্লাহর দল’ নতুন করে সংগঠিত হয়ে উঠছে বলে তথ্য পায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ওই সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত আমির ইব্রাহিম আহমেদ হিরোসহ আট জ্যেষ্ঠ নেতা র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন। এরপর ওই বছর ৬ নভেম্বর আল্লাহর দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

১৯৭৪ সালে দেশে জরুরী অবস্থা জারি হলে এ দমন-পীড়ন আরো বেড়ে যায়। ১৯৭৫ এর ২৫ জানুয়ারি বাকশাল গঠন করা হলে জাসদ নিষিদ্ধ হয়ে যায়। এ পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জাসদের বিরুদ্ধে হত্যা-জেল-জুলুমসহ চরম-দমন-পীড়ন চলতে থাকে। সভাপতি মেজর এম এ জলিল, সাধারণ সম্পাদক আ স ম আব্দুর রবসহ কেন্দ্রীয় কমিটির প্রায় সকল নেতা এবং জেলা ও থানা পর্যায়ের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, প্রধান নেতৃবৃন্দসহ জাসদের হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে কারাগারে বন্দী করে রাখা হয়। জেলের বাইরে থাকা জাসদ কর্মীদের অবস্থা ছিল বাঘের হিংস্র আক্রমণের মুখে হরিণের আত্মরক্ষা করার মত অবস্থা। এরকম পরিস্থিতিতে জেলের বাইরে থাকা জাসদের নেতা-কর্মীরা আত্মরক্ষা এবং লড়াই-সংগ্রাম এগিয়ে নিতে সাময়িককালের জন্য গণবাহিনী গঠন করে।

জাসদসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো নিষিদ্ধ হবার ফলে সৃষ্ট রাজনৈতিক শুন্যতার সুযোগ নিয়ে প্রাসাদ ষড়যন্ত্র শুরু হয়। জাসদ ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়ে প্রকাশ্য রাজনৈতিক অবস্থান গ্রহণ করে। জাসদ কখনই ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের পথে পা বাড়ায়নি, ষড়যন্ত্র-চক্রান্তকারীদের সাথে হাত মেলায়নি। খন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বে স্বাধীনতা বিরোধী চক্র ষড়যন্ত্রে মেতে উঠে। খন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বে ষড়যন্ত্রকারীরা ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে ক্ষমতা দখল করে। দেশের এ হতবিহ্বল ও সংঘাতময় পরিস্থিতিতে যখন স্বাধীনতার স্বপক্ষের সকল রাজনৈতিক দল কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে, তখন জাসদ কোনো ধরনের দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে না থেকে তাৎক্ষণিকভাবে খন্দকার মোশতাকের ক্ষমতা দখলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে রুখে দাঁড়ায়। খন্দকার মোশতাকের ৮৩ দিনের শাসনেও জাসদের নেতা-কর্মীদের উপর খুন-গুম-জেল-জুলুম চলতে থাকে। জলিল-রবসহ কারাবন্দী জাসদ নেতাদের কারাগারেই বন্দি রাখা হয়।

জিয়াউর রহমান গণবাহিনী নিষিদ্ধ করেন এবং আবু তাহেরকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন। এছাড়াও দলটির বিভিন্ন ব্যক্তিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারান্তরীণ করা হয়।

পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি বা পিবিসিপি বাংলাদেশের একটি নিষিদ্ধ মাওবাদী জঙ্গি গোষ্ঠী। ১৯৬৮ সালে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির বিভক্তির পর পিবিসিপি গঠিত হয়। এটি প্রধানত ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সীমান্তের কাছে বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমে খুলনা এবং যশোরের এলাকায় সক্রিয়।

পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি – মার্কসবাদী-লেনিনবাদী (পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি-মার্কসবাদী-লেনিনবাদী)
পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি – মার্কসবাদী-লেনিনবাদী (লাল পতাকা) ২০০২ সালে পিবিসিপি-এমএল থেকে বিভক্ত
পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি – মার্কসবাদী-লেনিনবাদী (জনযুদ্ধ) ২০০৩ সালে পিবিসিপি-এমএল থেকে বিভক্ত
পিবিসিপি এবং এর বিভক্ত দলগুলি একে অপরের প্রতি বিদ্বেষী, পিবিসিপি প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপগুলির সাথে একটি তুমুল যুদ্ধে ১৮ জনকে হত্যা করেছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here