ছাত্র আন্দোলনের প্রথম মামলা

0
17

হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করে সড়কে নামা কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের ওপর চড়াও না হলেও মামলা দিয়েছে পুলিশ।

এই মামলায় নাম ধরে কাউকে আসামি করা হয়নি। তবে ঢাকার শাহবাগে পুলিশের সাঁজোয়া যানে উঠে আন্দোলনকারীরা যে উল্লাস করেছিল, এজাহারে তার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

শাহবাগ থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মো. আরশাদ হোসেন শনিবার মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “অভিযুক্তদের কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। ভিডিও ফুটেজ ও ছবি দেখে আসামিদের পরিচয় নিশ্চিতের কাজ চলছে।”

সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহাল করে হাইকোর্ট রায় দেওয়ার পর জুলাই মাসের শুরু েথকে বিক্ষোভে নামে শিক্ষার্থীরা।

‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে তারা প্রায় প্রতিদিন সড়কে অবস্থান নিয়ে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছিল।

বুধবার আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায়ের ওপর স্থিতাবস্থা দেওয়ার পর পুলিশ এরপর সড়কে নেমে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করলে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিল।

তবে তাদের দাবি সরকারের প্রতি এবং তা কোটা সংস্কারের জন্য- এই বক্তব্য তুলে বৃহস্পতিবার পুলিশের বাধা উপেক্ষা করেই শাহবাগ অবরোধ করে। সেখানে নেওয়া এবটি সাঁজোয়া যান আন্দোলনকারীদের প্রতিরোধের মুখে সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছিল পুলিশ।

বৃহস্পতিবারের সেই ঘটনা ধরেই শুক্রবার রাতে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের পরিবহন বিভাগের গাড়িচালক খলিলুর রহমান বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় মামলাটি করেন।

মামলায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে পুলিশের যানবাহন ভাংচুর, পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা এবং মারধরের অভিযোগ আনা হয়েছে।

এজাহারে বলা হয়, গত ১১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে অজ্ঞাতপরিচয় ছাত্ররা জড়ো হয়। তারা বিভিন্ন হল প্রদক্ষিণ করে বিকাল ৪টার সময় স্লোগান দিতে দিতে শাহবাগ মোড়ের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। শাহবাগ মোড়ে তারা দাঙ্গা সৃষ্টি করে এবং পুলিশের সরকারি দায়িত্ব পালনে বাধা সৃষ্টি করে। তারা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে ফেলে এবং পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করে। এ সময় কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের মারধর করে জখমও করেন।

আন্দোলনকারীরা এসময় বিএসএমএমইউয়ের পাশে নিরাপদ স্থানে রাখা এপিসি-২৫ ও ওয়াটার ক্যাননের চারদিকে ঘেরাও করে তাতে উঠে উদ্দাম নৃত্য শুরু করে এবং ওয়াটার ক্যাননের চালককে গাড়ি থেকে জোর করে বের করার চেষ্টাও করে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।

এতে বলা হয়, শিক্ষার্থীরা এপিসি-২৫ এর সামনের দুটি এসএস স্ট্যান্ড, বনাটের উপরে বাম পাশে রেডিও অ্যান্টেনা এবং ডান পাশের পেছনের চাকার মাডগার্ড এবং ওয়াটার ক্যাননের বাম পাশের লুকিং গ্লাস ভেঙে অনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি করে।

“সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তারা ছাত্রদের বুঝিয়ে এপিসি-২৫ ও ওয়াটার ক্যানন থেকে নামিয়ে আনেন। তারা পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে পানির বোতল, টেপ টেনিস বল ও ইটের টুকরা ছুড়ে মারেন। এতে অনেক পুলিশ আঘাতপ্রাপ্ত হন।”

পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে বৃহস্পতিবার বিকালে শাহবাগে অবস্থান নেয় কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা। ছবি : হারুন অর রশীদ রুবেল
পুলিশ সদস্যরা ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করেছিলেন দাবি করে এজাহারে বলা হয়, তারপরও অজ্ঞাতপরিচয় ছাত্ররা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শাহবাগের আন্দোলনে যোগ দিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে দিতে বারডেম হাসপাতালের গেটের ব্যারিকেড ভেঙে ফেলে। তারা পুলিশ সদস্যদের আহত করে।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের ওপর হামলা এবং শাহবাগ থানায় ছাত্রদের ধরে নেওয়া হয়েছে বলে গুজব ছড়িয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করা হয়েছিল বলেও এজাহারে উল্লেখ করা হয়।

এজাহারে বাদী বলেন, বিবাদীরা বেআইনিভাবে জড়ো হয়ে দাঙ্গা সৃষ্টি করে সরকারি কাজে বাধা দেন। তারা স্বেচ্ছায় আঘাত করেন, পুলিশের যানবাহনের গতিরোধ করেন, দাঙ্গা দমনকারী কর্তব্যরতদের প্রতি আক্রমণ ও বাধা দিয়ে ক্ষতিসাধন ও ভয়ভীতি দেখান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here