সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনে চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা এসেছে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ প্ল্যাটফর্ম থেকে।
ব্লকেড, বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি ছেড়ে এবার গণপদযাত্রার মাধ্যমে রাষ্ট্রপতিকে স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচি দিয়েছে তারা।
শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে দুই সপ্তাহ ধরে রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে আসা শিক্ষার্থীরা।
‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’র অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “আমাদের ছাত্র ধর্মঘট চলবে। আগামীকাল সকাল ১১টায় রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি প্রদান এবং গণপদযাত্রা কর্মসূচি পালন করা হবে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে শুরু হবে গণপদযাত্রা। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পদযাত্রা করে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতিকে স্মারকলিপি দেবে।
আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা এবং পুলিশের মামলা দায়েরের নিন্দা জানিয়ে প্ল্যাটফর্মের আরেক সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “আমাদের আন্দোলন চলবে, হয়ত কর্মসূচিতে ভিন্নতা আসতে পারে। দাবি আদায় না হলে বৃহত্তর গণআন্দোলনে বাধ্য হব।”
এই প্ল্যাটফর্ম থেকে সরকারি চাকরিতে সব ধরনের কোটা সংস্কারের মাধ্যমে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানানো হচ্ছে।
বিষয়টি আদালতে থাকলেও সেবিষয়ে আন্দোলনকারীদের বক্তব্য, তাদের দাবি সরকারের কাছে। কোটা সংস্কার সরকারকেই করতে হবে।
সরকারি চাকরিতে আগে ৫৬ শতাংশ কোটা থাকলেও ২০১৮ সালে এক আন্দোলনের মুখে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর চাকরির ক্ষেত্রে তা তুলে দিয়েছিল সরকার।
তবে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালে একটি রিট আবেদন হলে গত ৫ জুন হাইকোর্ট এক রায়ে সব কোটা পুনর্বহাল করে।
এরপর নতুন করে আন্দোলন শুরু হলে সরকার হাইকোর্টের রায় স্থগিতে আপিল বিভাগে আবেদন করে। দুই শিক্ষার্থীও এই মামলায় পক্ষভুক্ত হয়ে রায় স্থগিতের আবেদন জানায়।
এদিকে জুলাই মাসের শুরুতে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ রাজপথে কর্মসূচিতে নামে। তারা এর নাম দিয়েছে বাংলা ব্লকেড।
শুরুতে তারা শুধু বিকালে শাহবাগে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ চালিয়ে গেলেও পরে আন্দোলনের পরিসর বিস্তৃত হয়। গত বুধবার দিনব্যাপী অবরোধের ডাক দেয় তারা, যা পালনে সারাদেশেই শিক্ষার্থীরা সড়কে নামে। এতে দেখা দেয় জনদুর্ভোগ।
এদিকে গত বুধবার আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায়ের ওপর চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা জারি করে। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান এরপর শিক্ষার্থীদের কোনও বক্তব্য থাকলে তা আদালতকে জানাতে অনুরোধ রেখে রাজপথ ছাড়ার আহ্বান জানান।
এরপর পুলিশও আন্দোলনকারীদের হুঁশিয়ার করে। তবে তা উপেক্ষা করেই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে এই শিক্ষার্থীরা।
সরকারের বিরুদ্ধে দমন-পীড়নের অভিযোগ তুলে নাহিদ বলেন, “আন্দোলনটি যৌক্তিক ন্যায়সম্পূর্ণ এবং শান্তিপূর্ণভাবে চালিয়ে যাচ্ছিলাম। সরকারের উচিৎ ছিল প্রথম থেকেই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার পরিস্থিতি তৈরি করা, দৃশ্যমান পদক্ষেপের মাধ্যমে কোটা সমস্যা নিরসন করা।
“কিন্তু সরকার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠন নানান শক্তির মাধ্যমে আন্দোলন দমনের পরিকল্পনা করছে।”
এটা সরকারের জন্য ‘বুমেরাং’ হবে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, “এজন্য যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে, তার দায় সরকারকে নিতে হবে।
“ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। শিক্ষকদের আন্দোলন শেষে তারা যদি ক্লাস কার্যক্রম শুরু করে, তারপরও শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরে যাবেন না। ছাত্র ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে।”