মাধ্যমিকের ফলে এগিয়ে মেয়েরা

0
42

মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষা-২০২৪ এর ফল প্রকাশিত হয়েছে। এবছর পাসের হার ৮৩.০৪ শতাংশ। গত বছরের তুলনায় পাসের হার বেড়েছে ২.৬০ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার ১২৯ জন শিক্ষার্থী। পাসের হার ও জিপিএ-৫ দুটোতেই এগিয়ে মেয়েরা। গত বছরের তুলনায় এবছর জিপিএ-৫ কমেছে ১ হাজার ৪৪৯। পাসের হারে এগিয়ে যশোর শিক্ষা বোর্ড আর জিপিএ-৫ বেশি পেয়েছে ঢাকা বোর্ডের শিক্ষার্থীরা।
রোববার চলতি বছরের ফল প্রকাশ করা হয়। সকাল সোয়া ১০টায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের সারসংক্ষেপ তুলে দেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী ও বোর্ড চেয়ারম্যানরা। এরপর মাধ্যমিক ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি বলেন, শিক্ষায় ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের অংশগ্রহণ বেশি, ফলাফলেও মেয়েরা এগিয়ে, এটি যেমন সুখবর।একইভাবে কেন ছেলেরা পিছিয়ে সেটির কারণ খুঁজে বের করতে হবে। যার যার বোর্ডে আপনারা খবর নেন, কী কারণে ছেলেরা পিছিয়ে। ইদানীং কিশোর গ্যাং দেখছি। এগুলো তো আমরা দেখতে চাই না। সেখান থেকে তাদের বিরত করা, একটা সুষ্ঠু পরিবেশে নিয়ে আসা আমাদের দায়িত্ব। আমরা বিবিএসকেও বলবো দেখতে।
শেখ হাসিনা বলেন, যারা কৃতকার্য হতে পারেনি, আমি বলবো, তাতে মন খারাপ করার কিছু নেই। আবার চেষ্টা করলে হয়তো ভালো করতে পারবে। বাবা-মা অভিভাবক যেন এ বিষয়ে গালমন্দ না করেন তাদের।
প্রকাশিত ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি বছর পাসের হার ৮৩.০৪ শতাংশ। যেটি গত বছর ছিল ৮০.৩৯ শতাংশ। সেই হিসেবে এবার পাসের হার ২.৬০ শতাংশ বেড়েছে। এবছর পাস করেছে ১৬ লাখ ৭২ হাজার ১৫৩ জন পরীক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ছাত্র ৮ লাখ ৬ হাজার ৫৫৩ জন এবং ছাত্রী ৮ লাখ ৬৫ হাজার ৬০০ জন। ছাত্রীদের পাসের হার ৮৪.৪৭ শতাংশ এবং ছাত্রদের পাসের হার ৮১.৫৭ শতাংশ। ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের (এসএসসি) পাসের হার ৮৩.৭৭ শতাংশ, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে (দাখিল) পাসের হার ৭৯.৬৬ শতাংশ, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) পাসের হার ৮১.৩৮ শতাংশ। পাসের হারে এগিয়ে যশোর শিক্ষা বোর্ড। পাসের হার ৯২.৩২ শতাংশ। পরের অবস্থানে থাকা রাজশাহী বোর্ডের পাসের হার ৮৯.৩ শতাংশ। এ ছাড়াও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৮৩.৯২ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৮২.৮ শতাংশ, কুমিল্লায় ৭৯.২ শতাংশ, দিনাজপুরে ৭৮.৪ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৮৫ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাস করেছে।এ বছর জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার ১২৯ জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে মেয়ে ৯৮ হাজার ৭৭৬ এবং ছেলে ৮৩ হাজার ৩৫৩ জন। মেয়েদের মধ্যে জিপিএ-৫ বেশি পেয়েছে ১৫ হাজার ৪২৩ জন। সবচেয়ে বেশি জিপিএ-৫ পেয়েছে ঢাকা বোর্ডের পরীক্ষার্থীরা, ৪৯ হাজার ১৯০ জন। কুমিল্লা বোর্ডে জিপিএ ৫- ১২ হাজার ১০০ জন, সিলেট বোর্ডে ৫ হাজার ৪৭১ জন, দিনাজপুর বোর্ডে ১৮ হাজার ১০৫ জন, ময়মনসিংহে ১৩ হাজার ১৯৭ জন, রাজশাহীতে ২৮ হাজার ৭৪ জন, যশোরে ২০ হাজার ৭৬০ জন। মাদ্রাসা বোর্ডে ১৪ হাজার ২০৬ জন এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ হাজার ৮১ জন।
এদিকে সারা দেশের ২ হাজার ৯৬৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষার্থী পাস করেছে। গত বছর শতভাগ পাসের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৩৫৪টি। শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেড়েছে ৬১৪টি। কেউ পাস করেনি এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেড়ে হয়েছে ৫১টি। গত বছর ছিল ৪৮টি। দেশের বাইরের ৮টি কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নেয় ৩৪৭ জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে পাস করেছে ২৯৮ জন। ফেল করেছে ৪৯ জন। গড় পাসের হার ৮৫.৮৮ শতাংশ। শতভাগ পাস করেছে দুটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
এদিন দুপুরে সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ফলাফলের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। তিনি বলেন, প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হলেও করোনার কারণে গত তিন বছর যথাসময়ে পরীক্ষা শুরু করা যায়নি। একইসঙ্গে পূর্ণ সিলেবাস ও পূর্ণ নম্বরেও পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। স্বস্তির বিষয় হলো আমরা এ শিডিউল বিপর্যয় ক্রমান্বয়ে কাটিয়ে উঠেছি। এবছর এসএসসি পরীক্ষা যথাসময়ে সব বিষয়ে, পূর্ণ সিলেবাসে ও পূর্ণ নম্বরে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১৫ই ফেব্রুয়ারি এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয়ে শেষ হয় ১২ই মার্চ। এরপর ১৩ থেকে ২০শে মার্চ পর্যন্ত হয় ব্যবহারিক পরীক্ষা। এতে সারা দেশের ৩ হাজার ৭০০ কেন্দ্রে ২৯ হাজার ৭৩৫ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। এবছর পরীক্ষার্থী ছিল ২০ লাখ ২৪ হাজার ১৯২ জন।