রেকর্ড চিনি উৎপাদনের পথে ভারত, বিশ্ববাজারে কমতে পারে দাম

0
9


ভারত আগামী অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া পরবর্তী বিপণন বছরে রেকর্ড পরিমাণ চিনি উৎপাদনের আশা করছে। এর প্রধান কারণ যথেষ্ট পানির সরবরাহ এবং প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য অর্থকরী ফসলে কম দাম পাওয়ার কারণে এবার আখ চাষে ঝুঁকেছেন বিপুলসংখ্যক কৃষক।

স্থানীয় কৃষক এবং চিনি শিল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে।

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম চিনি উৎপাদক দেশ ভারত। কম বৃষ্টিপাতের কারণে আখের ফলন কমে যাওয়ায় দুই বছরের জন্য রপ্তানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে দেশটি। তবে ব্যাপক উৎপাদন সম্ভাবনা দেখা দেওয়ায় ২০২৫–২৬ সালে আবার রপ্তানি শুরু করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত পুরোদমে রপ্তানি শুরু করলে বিশ্ববাজারে চিনির মূল্য কমে আসতে পারে। কারণ দেশটি এমন এক সময়ে বিশ্ব বাজারে চিনি সরবরাহ বৃদ্ধি করবে যখন শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে শীর্ষ উৎপাদক ব্রাজিল থেকে রপ্তানি কমে যাওয়ার পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

মহারাষ্ট্র রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলীয় সোলাপুর জেলার কৃষক অমর চবন এবার ৬ একর জমিতে আখ লাগিয়েছেন। তিনি রয়টার্সকে বলেছেন, ‘গত বছর, আমরা আখ লাগাতে পারিনি কারণ সেচের জন্য পানি ছিল না। এবার, প্রচুর পানি রয়েছে কারণ বৃষ্টিপাত ভালো হয়েছে।’

সোলাপুরের কৃষকেরা উজ্জানি বাঁধের ওপর নির্ভর করেন। এই বাঁধ এখন ১০০ শতাংশ সক্ষমতায় রয়েছে, যেখানে গত ডিসেম্বরে ছিল মাত্র ২৫ শতাংশে।

মহারাষ্ট্র এবং পার্শ্ববর্তী কর্ণাটকের জলাধারগুলো, একত্রে ভারতের প্রায় অর্ধেক চিনি উৎপাদনের জন্য পানি সরবরাহ করে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের তুলনায় এখন অনেক বেশি পানি ধরে রেখেছে এই জলাধারগুলো।

ভারতের বার্ষিক মৌসুমি বৃষ্টিপাত আখের মতো সেবানির্ভর ফসলগুলোর আবাদ ও ফলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ বছর মহারাষ্ট্র এবং কর্ণাটকের আখের আবাদ অঞ্চলগুলো গড়ের চেয়ে ৩৯ শতাংশ বেশি বৃষ্টি পেয়েছে।

ন্যাশনাল ফেডারেশন অব কো–অপারেটিভ সুগার ফ্যাক্টরিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকাশ নায়কনাভারে বলেন, ‘কৃষকেরা পূর্ণ উদ্যমে আখ রোপণ করছেন। এই রোপণ কার্যক্রম আগামী মৌসুমে রেকর্ড পরিমাণ চিনি উৎপাদনের সম্ভাবনা তৈরি করছে।’ তিনি উল্লেখ করেন, এ বছর রোপণ করা আখ আগামী বিপণন বছরে ফসল কাটার জন্য প্রস্তুত হবে।

ফেডারেশনের হিসাবে, বর্তমান মৌসুমে ভারতের চিনি উৎপাদন ২ কোটি ৮০ লাখ টনে নেমে আসার আশঙ্কা রয়েছে, যা গত বছরের ৩ কোটি ১৯ লাখ টনের চেয়ে কম। যেখানে ভারতের অভ্যন্তরীণ বার্ষিক চাহিদাই প্রায় ২ কোটি ৯৬ লাখ টন।

এদিকে প্রচুর পানি পাওয়ার কারণেই যে ভারতের কৃষকেরা এবার আখ চাষের ঝুঁকেছেন এমন নয়। অনেক কৃষক সয়াবিন এবং তুলার মতো বিকল্প ফসল থেকে এবার কম মুনাফা পাওয়া আখ চাষে ফিরে এসেছেন।

মহারাষ্ট্র–ভিত্তিক সুগার মিল ন্যাচারাল সুগার অ্যান্ড অ্যালাইড ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বি. বি. থোম্বারে রয়টার্সকে বলেন, গত বছর কৃষকেরা পানির অভাবে আখ বাদ দিয়ে অন্যান্য ফসলে ঝুঁকেছিলেন। কিন্তু তাঁরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। এখন তাঁরা এমন একটি ফসল খুঁজছেন যা নিশ্চিত লাভ দেবে।

এবারের বর্ধিত আখ রোপণ ভারতের পরবর্তী মৌসুমে ৩০ লাখ থেকে ৫০ লাখ টন চিনি রপ্তানি করতে সক্ষম করবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবং পোকামাকড়ের তেমন সংক্রমণ না ঘটলে এমনটি খুবই সম্ভব বলে আশা আশা করছেন ফিলিপ ক্যাপিটাল ইন্ডিয়ার পণ্য গবেষণার ভাইস প্রেসিডেন্ট অশ্বিনী বানসোড।

ভারতের চিনি রপ্তানি বাজারের মধ্যে রয়েছে—ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত। ২০২২–২৩ পর্যন্ত পাঁচ বছর বিশ্বের ২ নম্বর রপ্তানিকারক ছিল ভারত, যেখানে তাদের বার্ষিক গড় রপ্তানি ৬৮ লাখ টন।





Source link

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here