মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলা করায় ইউক্রেনের কড়া সমালোচনা করেছেন নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) প্রকাশিত টাইম ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে ইউক্রেন সম্পর্কিত মার্কিন নীতিতে তিনি পরিবর্তন আনতে পারেন। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
টাইমস ম্যাগাজিনের বর্ষসেরা ব্যক্তি (পার্সন অব দ্য ইয়ার) হওয়ার পর দেওয়া সাক্ষাৎকারের এক পর্যায়ে তিনি বলেছেন, যা ঘটছে তা এক ধরনের পাগলামি। এটা মূর্খতা। রাশিয়ার শত শত মাইল ভেতরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার খুব দৃঢ় বিরোধী। আমাদের এটা করার কারণ কী! আমরা কেবল এই যুদ্ধকে আরও মারাত্মক করছি ও পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছি। এটা অনুমোদন দেওয়া উচিত হয়নি।
গত মাসে দীর্ঘ পাল্লার মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার গভীরে হামলায় ইউক্রেনের ওপর আরোপিত বিধিনিষেধ শিথিল করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এটি ছিল কিয়েভকে সহায়তায় বাইডেনের সর্বশেষ প্রচেষ্টা। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির অনুরোধ ও রাশিয়ার পক্ষে ১৫হাজার উত্তর কোরীয় সেনা মোতায়েনের পরিপ্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
ট্রাম্প আরও বলেছেন, প্রায় তিন বছর ধরে চলমান এই যুদ্ধের দ্রুত অবসান চান তিনি। তার কাছে খুব ভালো একটা পরিকল্পনা আছে, কিন্তু এখনই তা প্রকাশ করলে তা মূল্যহীন হয়ে যাবে।
সাক্ষাৎকারের এ পর্যায়ে তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, প্রয়োজনে ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন প্রত্যাহার করার কথা ট্রাম্প বিবেচনা করছেন কিনা। জবাবে তিনি বলেছেন, তিনি একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে চান। সে লক্ষ্য অর্জনের একমাত্র উপায় হলো কিয়েভকে ত্যাগ না করা।
উত্তর কোরীয় সেনাদের উপস্থিতি যুদ্ধকে আরও জটিল করে তুলেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সামনের ২০ জানুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণ করবেন ট্রাম্প। গত সপ্তাহে জেলেনস্কি ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে প্যারিসে বৈঠক করেছেন তিনি। তার দ্রুত যুদ্ধের অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি নিয়ে উদ্বিগ্ন কিয়েভ। তাদের আশঙ্কা, ইউক্রেনের ওপর শর্ত চাপিয়ে দেওয়ার সুযোগ পেতে পারে রাশিয়া।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যক্তি রয়টার্সকে জানিয়েছেন, বৈঠকে ইউক্রেনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পাওয়ার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন জেলেনস্কি। নিরাপত্তার খাতিরেই তিনি দীর্ঘদিন ধরে ন্যাটোর সদস্যপদ চেয়ে আসছেন।
টাইমসের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, সংঘাতে মৃতের সংখ্যা, বিশেষ করে গত এক মাসে, আশঙ্কাজনকভাবে বেশি। তিনি বলেন, ‘আমি উভয় পক্ষের কথাই বলছি। এটি উভয় পক্ষের জন্যই এই যুদ্ধ শেষ করার প্রয়োজন।’
রুশ ও পশ্চিমা কর্মকর্তাদের মতে যুদ্ধ বর্তমানে সবচেয়ে বিপজ্জনক পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে রুশ সেনারা তাদের দ্রুততম অগ্রগতি দেখাচ্ছে।
রাশিয়া গত ২১ নভেম্বর ইউক্রেনের ডিনিপ্রো শহরে ওরেশনিক নামক একটি হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহকৃত এটিএসিএমএস ও ব্রিটিশ স্টর্ম শ্যাডো ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে ইউক্রেনের হামলার প্রতিক্রিয়া হিসেবে উল্লেখ করেছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
এদিকে, ওয়াশিংটন জানিয়েছে, ইউক্রেনে আরও মার্কিন আকাশ প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম পাঠানো হবে।
গত শনিবার ইউক্রেনের জন্য ৯৮৮ মিলিয়ন ডলারের নতুন অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে ওয়াশিংটন।
নির্বাচনের পর থেকে পুতিনের সঙ্গে কথা হয়েছে কি না জানতে চাইলে উত্তর দিতে অস্বীকৃতি জানান ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘আমি আপনাকে এটা বলতে পারি না। এটি অনুচিত।’