বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের লতিফের ছিলা এলাকায় লাগা আগুন ৩০ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে এসেছে। রোববার বিকাল ৫টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন ফায়ার সার্ভিসের মোংলা স্টেশন কর্মকর্তা মো. কায়মুজ্জামান।
আগুন লাগার দ্বিতীয় দিন রোববার সকালে সুন্দরবন বিভাগের চারটি অফিসের কর্মকর্তা ও বনরক্ষীসহ ফায়ার সার্ভিসের বাগেরহাট, মোরেলগঞ্জ, মোংলা, শরণখোলা, কচুয়ার ৫টি স্টেশনের সদস্য, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, পুলিশ, ট্যুরিষ্ট পুলিশ ও সুন্দরবন সুরক্ষায় টিমের স্থানীয় সদস্যরা একযোগে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে।
আগুন নিয়ন্ত্রণে যুক্ত হয় বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টার। হেলিকপ্টার থেকেও আগুন লাগা স্থানগুলোতে ফেলা হয় পানি। এর আগেই বিশ্ব ঐতিহ্য এই সংরক্ষিত বনের বিভন্ন স্থানের প্রায় ১০ একর এলাকার ছোট-ছোট গাছপালাসহ লতাগুল্ম আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এ নিয়ে গত ২০ বছরে সুন্দরবনে ২৬টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৮৬ একর বন পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কোন বন্যপ্রাণী মারা যাওয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি। চাঁদপাই রেঞ্জের আমুরবুনিয়া টহল ফাঁড়ি সংলগ্ন লতিফের ছিলা এলাকার শনিবার সকাল ১১টার দিকে লোকলয়ের লোকজন সুন্দরবন বিভাগের বনের বিভিন্ন স্থানে ধোঁয়ার কুন্ডলী দেখতে পায়। পরে স্থানীয়রা দুপুরে আমুরবুনিয়া টহল ফাঁড়ি বন কর্মকর্তা ও বনরক্ষীদের বিষয়টি জানায়।
তারা বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে দ্রুত বনের দুই কিলোমিটার গহীনে লতিফের ছিলা এলাকার বিভিন্ন স্থানে দাউ-দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখে। আমুরবুনিয়া টহল ফাঁড়িসহ আশপাশের ৪টি বন অফিসের কর্মকর্তা ও বনরক্ষীসহ স্থানীয়রা আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে মোরেলগঞ্জ, মোংলা, শরণখোলা ফায়ার সার্ভিসের ৩টি ইউনিট সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌছায়। তবে আশপাশে পানির উৎস্য না থাকা ও সন্ধ্যা হয়ে আসায় তারাও বন কর্মকর্তা ও বনরক্ষীসহ স্থানীয়দের সাথে গহীন অরণ্য থেকে লোকালয়ে ফিরে আসেন।
রোববার সকালে খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মিহির কুমার দো’র নেতৃত্বে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাজী মোহম্মদ নুরুল করিম বন কর্মকর্তা, বনরক্ষী ও সুন্দরবন সুরক্ষায় টিমের সদস্যদের দিয়ে প্রথমেই আগুন লাগার স্থানগুলোতে ঘিরে প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা জুড়ে লাইন অফ ফায়ার (নালা) কেটে দেয়। দুই কিলোমিটার দূরে ভোলা নদী থেকে লাইন টেনে লাইন অফ ফায়ার নালায় পানি ভরে দেয়। যাকে আগুন বনের অন্য স্থানগুলোতে ছড়িয়ে পরতে না পারে। এরপর ফায়ার সার্ভিসের বাগেরহাট, মোরেলগঞ্জ, মোংলা, শরণখোলা, কচুয়ার ৫টি স্টেশনের সদস্য বনের বিভিন্ন স্থানে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রনের কাজ শুরু করে। এ সময়ে নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ ও সুন্দরবন সুরক্ষায় টিমের স্থানীয় সদস্যরা একযোগে আগুন নিয়ন্ত্রনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। দুপুরে সুন্দরবন আগুন নিয়ন্ত্রণে এই প্রথম যুক্ত হয় বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টার। হ্যালিকপ্টার থেকেও আগুন লাগা স্থানগুলোতে ফেলা হয় পানি। দুপুর ২টার মধ্যে আগুনের তীব্রতা কমে আসতে থাকে।
ফায়ার সার্ভিসের মোংলা স্টেশন কর্মকর্তা মো. কায়মুজ্জামান জানান, সুন্দরবনে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রনে আসলেও সোমাবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পর্যবেক্ষনে রাখা হবে। ধোঁয়ার কুন্ডলী দেখলে দ্রুত পানি দিয়ে ভিজিয়ে দেয়া হবে। অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন প্রধান বন সংরক্ষক (সিসিএফ) মো. আমির হোসাইন চৌধুরী, বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খালিদ হোসেন ও পুলিশ সুপার আবুল হাসনাত খান। পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মোহম্মদ নুরুল করিম জানান, আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। কিভাবে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে সে বিষয়ে চাঁদপাই রেঞ্জে কর্মকর্তা (এসিএফ) রানা দেবকে প্রধান করে ৩ সদস্যের তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে। ৭ কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট পাবার পর আগুন লাগার বিষয়টি বিস্তরিত জানানো হবে।
২২ বছরে ৩২ বার আগুন
গত ২২ বছরে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগে ৩২ বার আগুন লাগে। প্রতিবার এর কারণ অনুসন্ধান, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তবে সেসব তদন্তের প্রতিবেদন ও দুর্ঘটনা এড়াতে করা সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন হতে দেখা যায়নি। ফলে নিয়মিত বিরতিতে আগুন লাগছেই।
অগ্নিকাণ্ড এড়াতে বিভিন্ন সময় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে জোরালোভাবে তিনটি সুপারিশ করা হয়। সুপারিশ তিনটি হচ্ছে- সুন্দরবন সংলগ্ন লোকালয়ের সঙ্গে মিশে যাওয়া নদী ও খাল খনন, অগ্নিকাণ্ডপ্রবণ এলাকায় প্রতি দুই কিলোমিটার পরপর ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করে নজরদারির ব্যবস্থা করা, চাঁদপাই রেঞ্জের ভোলা নদীর কোল ঘেঁষে বনের পাশ দিয়ে