অবৈধ লাইনের ছড়াছড়ি

0
69

রাজধানী জুড়ে বিদ্যুতের অবৈধ লাইনের ছড়াছড়ি। বিদ্যুৎ বিভাগের অসাধু কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর সহযোগিতায় প্রতিদিন অবৈধভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে হাজারো মানুষ। অথচ বিদ্যুতের লোডশেডিং নিয়ে দেশজুড়ে ভোগান্তি চরমে। বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক ছড়িয়েছে জাতীয় সংসদেও। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় চার্জ থেকে শুরু করে রাজধানীর ফুটপাথ দখল করে গড়ে ওঠা শত শত দোকান, বস্তিঘর, আবাসিক বাড়ির ছোট ছোট কারখানায় দেদারছে চলছে অবৈধ বিদ্যুৎ চুরির মহোৎসব। সংশ্লিষ্ট অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে এভাবে মিটার ছাড়া বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে যেমন আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যাচ্ছেন অনেকে, তেমনই রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। সরজমিন হাজারীবাগ, রায়ের বাজার, মোহাম্মদপুর, কামরাঙ্গীরচর, মিরপুর, গুলিস্তান, পোস্তগোলা, শ্যামপুর, জুরাইন, কাওরান বাজার, কদমতলী, যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, পুরান ঢাকাসহ রাজধানীর বিভিন্ন অলিগলি ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে।
রাজধানীর রায়ের বাজার বুদ্ধিজীবী এলাকার একটি রিকশার গ্যারেজে গিয়ে দেখা যায়, মূল খুঁটির পাশের বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের দু’টি তার থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় সংযোগ নেয়া হয়েছে গ্যারেজটিতে। যেখানে প্রতিরাতে ২২টি রিকশার ব্যাটারি চার্জ করা হয়। গ্যারেজটির প্রবেশ মুখে একাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো। আছে বিদেশি কুকুরও।

মধ্যে একটি মিটার দৃশ্যমান থাকলেও তার সঙ্গে সঞ্চালন লাইনের কোনো সম্পর্ক নেই। যা দিয়ে চার্জ করা হচ্ছে একাধিক রিকশা। তবে গ্যারেজটির মালিক মো. রফিক মিয়া বলেন, তার রিকশাগুলো বৈধ লাইনেই চার্জ করা হয়।
এলাকাটিতে আরও বেশক’টি ব্যাটারিচালিত রিকশার গ্যারেজ রয়েছে। সবক’টিতেই একই ভাবে তার টেনে লাইন নেয়া হয়েছে। কামরাঙ্গীরচর এলাকারও বেশির ভাগ রিকশা ব্যাটারিচালিত। এসব রিকশার ব্যাটারিতেও বিদ্যুতের খুঁটি ও বিদ্যুৎ সঞ্চালনের লাইন থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় নেয়া লাইন দিয়ে চার্জ করা হয়। ইশতিয়াক হোসেন নামে এলাকাটির এক বাসিন্দা বলেন, কামরাঙ্গীরচরে অসংখ্য ব্যাটারিচালিত রিকশার গ্যারেজ রয়েছে। রহস্যজনক কারণে এসব গ্যারেজের সবক’টিতেই শুধুমাত্র রাতের বেলাতেই রিকশার ব্যাটারিতে চার্জ করা হয়। এর মূল কারণ হচ্ছে- এসব গ্যারেজের একটিতেও বৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। গ্যারেজগুলোর মালিকরা স্থানীয় লাইনম্যানদের নির্দিষ্ট মাসোহারা দিয়ে এসব লাইন চালান। মো. আজগার নামে এক গ্যারেজমালিক বলেন, মূলত বৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে ব্যাটারি চার্জ করে রিকশা ভাড়া দিয়ে পোষায় না। যা জমা পাই তার বেশির ভাগই রিকশার রক্ষণাবেক্ষণে চলে যায়। যে কারণে প্রতিটি গ্যারেজেই অবৈধ লাইন দিয়ে ব্যাটারি চার্জ দিতে হয়। মুগদা এলাকাতেও বেশক’টি ব্যাটারিচালিত রিকশার গ্যারেজ রয়েছে। এসব গ্যারেজেও ব্যাটারি চার্জ করা হয় অবৈধ লাইন দিয়ে। সোহেল রানা নামে এলাকাটির এক বাসিন্দা তার বাড়ির পাশের রিকশার গ্যারেজ দেখিয়ে বলেন, এই গ্যারেজটিতে প্রতিরাতে অন্তত ২০ থেকে ২৫টি অটোরিকশার ব্যাটারি চার্জ দেয়া হয়। ওই রিকশার ব্যাটারিগুলো কোনো বৈধ মিটারের বিদ্যুৎ দিয়ে চার্জ দেয়া হয় না। সরাসরি বিদ্যুতের খুঁটি থেকে সংযোগ নিয়ে রিকশাগুলোর ব্যাটারি চার্জ দেয়া হয়। বিষয়টি সকলেই জানে। এর সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিদ্যুৎ অফিসের লোক জড়িত। এভাবেই রাজধানীর মোহাম্মদপুর, বেড়িবাঁধ, হাজারীবাগ, রায়েরবাগ, মানিকনগর, বাসাবো, মুগদা, খিলগাঁও, মান্ডা, নন্দীপাড়া, রামপুরা, ইসলামবাগ, পশ্চিম ধানমণ্ডি, সোয়ারীঘাট, বাবুবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় গ্যারেজে হাজার হাজার অটোরিকশা প্রতিরাতে চার্জ করা হচ্ছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here